প্রকাশিত: ২১/০৮/২০১৮ ২:২১ এএম

ডেস্ক নিউজ – ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু কিনতে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। রাজধানীর বিভন্ন পাড়া মহল্লায় ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির জন্য কেনা গরু-ছাগলগুলো নিজ নিজ বাসার গেটের সামনে বাঁধা রয়েছে। ঈদের আগে থেকেই কেনা এসব পশুর খাদ্য বিক্রির জন্য তাই বিভিন্ন বাজার, গলির মুখে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসেছে ছোট ছোট দোকান। এ সব দোকানে গরুর খাদ্য হিসেবে ভুসি, ছোলা ভাঙা, খড় ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে। তবে মুশকিল হয়েছে কোরবানির জন্য কেনা ছাগলগুলো নিয়ে। কারণ গরুকে খাওয়ানোর জন্য অনেক প্রকার ব্যবস্থা থাকলেও ছাগলের খাদ্যের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

অনেকে ছাগলের খাদ্য হিসেবে ভুসি কিনলেও খাসি ছাড়া অন্য ছাগল এই ভুসি খেতে অভ্যস্ত নয়। কারণ ছাগলের মূল খাদ্য ঘাস, লতাপাতা। তবে কাঁঠাল গাছের পাতা ছাগলের প্রিয় একটি খাদ্য। তাই যারা ছাগল কিনেছেন, তারা এখন কাঁঠাল পাতার খোঁজ করছেন। আবার এই সুযোগে অনেক ছিন্নমূল শিশু পাতা বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে।

২০ আগস্ট, সোমবার রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকায় দেখা যায়, কয়েকজন শিশু কাঁঠাল গাছের পাতা হাতে নিয়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে দেখে মনে হচ্ছিল, তাদের নিজেদের বাসায় কোরবানির জন্য কেনা ছাগলকে খাওয়াতেই এই কাঁঠাল গাছের পাতা হয়তো তারা সংগ্রহ করছে। কিন্তু কাছে যেতেই একজন বলে ওঠে, ‘স্যার লইবেন, লইবেন।’ অপর একজন বলে, ‘স্যার, আমারটা লন।’

কাঁঠাল পাতা বিক্রি করছেন কয়েক জন পথশিশু।

দাম জিজ্ঞাসা করতে একজন বলল, ‘এক মুঠা ২৫ টাকা।’ এ সময় তার পাশে থাকা অপর একজন বলল, ‘আমারটা লন এক মুঠা ২০ টাকা।’ মূলত এক মুঠা বলতে ছোট ছোট কয়েকটি কাঁঠাল গাছের ডাল একসঙ্গে সুতা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিটি মুঠাতে ১০০ থেকে ১৫০টির মতো পাতা রয়েছে।

এই খুদে বিক্রেতাদের বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাইলে এনাম নামের এক শিশু বলে, ‘আমি পাশের বস্তিতে থাকি। বাবা রিকশা চালায়, কিন্তু কয়দিন আগে এক্সিডেন্ট কইর‌্যা এখন খালি বাসায় শুইয়া থাকে।’

পাতা বিক্রির টাকা দিয়ে কি করবে–জানতে চাইলে এনাম বলে, ‘মায় মাইনষের বাসায় কাম করে। ওই ঈদে হেরে সেই বাসাত থাইকা শাড়ি দিছে। কিন্তু এবার হেরা গরু জবাই দিবো। তাই ঈদে মারে শাড়ি দিবো না। মায় কইছে ঈদে খালি ওই বাসাত থাইক্যা গোশত দিবো। তাই এই পাতা বেইচ্যা মাকে একটা শাড়ি কিইনা দিমু।’

কাঁঠাল গাছের পাতা হাতে নিয়ে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে শিশুরা।

সেখানে উপস্থিত নিরব নামের শিশু জানায়, সে টোলারবাগ এলাকায় তার মায়ের সাথেই থাকে। বাবা নেই। নিরবের মা অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালায়। তবে এই কাঁঠাল পাতা বিক্রির টাকা দিয়ে নিরব মায়ের জন্য কিছু কিনবে না। সে নিজের জন্য অনেকগুলো পটকা কিনবে।

ঈদের দিন ও আগের দিন সন্ধ্যায় সেই পটকা ফুটিয়ে আনন্দ উদযাপন করবে বলে জানায় নিরব।

পাঠকের মতামত